পহেলা বৈশাখের কবিতা ।বাংলা নববর্ষের কবিতা সমগ্র। বাংলা নতুন বছরের পহেলা বৈশাখী কবিতা

পহেলা বৈশাখ নিয়ে বাঙালি জাতির জন্য তো পূর্ণ এবং জনপ্রিয় কবিতা রয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা নববর্ষের কবিতা লিখেছেন। তাছাড়া পহেলা বৈশাখ নিয়ে অনেক ধরনের কবিতা রয়েছে এবং কবিতাগুলোর মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ও উদযাপন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।। আসুন আজ আমরা পহেলা বৈশাখের সকল কবিতা নিজে ধারাবাহিকভাবে আপনাদের সুবিধার্থে তুলে ধরবো।
পহেলা বৈশাখের কবিতা
নিচের কবিতাগুলো পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কবি সাহিত্য লিখেছেন।
পহেলা বৈশাখ আজ
– শহীদ উদ্দীন আহমেদ
পহেলা বৈশাখ আজ শুভ নববর্ষ,
জাগে বাঙালির বুকে অনাবিল হর্ষ!
বাংলাদেশে ঘরে ঘরে আনন্দ উৎসব,
বর্ষ বরণ করতে এত কলরব!
দিকে দিকে আজ চলে কত আয়োজন,
বর্ষ বরণের গান গাইছে সুজন ;
রমনার বটমূলে ছায়ানট গায়,
এসো হে বৈশাখ আজি আনন্দ ধারায়
সব বঞ্চনা বিদ্বেষ দূর করে এসো,
মনের দীনতা গুলো মুছে দিতে এসো,
এসো হে বৈশাখ নব চেতনায় এসো,
নব প্রভাতে বৈশাখী ঝড় হয়ে এসো!
নতুন আলোয় রাঙা সকলের মন,
নব প্রত্যাশায় প্রাণে জাগে আলোড়ন।
পহেলা বৈশাখ নিয়ে ছোট কবিতা।
বাংলা কবিতায় বৈশাখ
‘বৈশাখে অনলসম বসন্তের খরা।
তরুতল নাহি মোর করিকে পসরা
পায় পোড়ে খরতর রবির কিরণ।
শিরে দিতে নাহি আঁটে খুঞ্চার বসন
নিযুক্ত করিল বিধি সবার কাপড়।
অভাগী ফুল্লরা পরে হরিণের দুড়
পদ পোড়ে খরতর রবির কিরণ।
শিরে দিতে নাহি আঁটে অঙ্গের বসন
বৈশাখ হৈল আগো মোর বড় বিষ।
মাংস নাহি খায় সর্ব্ব লোকে নিরামিষ’ আর প্রাপ্তি–অপ্রাপ্তির বিহ্বলতা– |
||
ভূতরূপে সিন্ধুজনে গড়ায়ে পড়িল
বৎসর কালের ঢেউ, ঢেউর গমনে নিত্যগামী রথ চক্র নীরবে ঘুরিল আবার আয়ুর পথে হৃদয় কাননে কত শত আশা লতা শুকায়ে মরিল হায়রে কব তা কারে, কবিতা কেমনে কি সাহসে আবার তা রোপিব যতনে সে বীজ, যে বীজ ভূতে বিভল হইল |
||
পহেলা বৈশাখ নিয়ে কবিতা আবৃত্তি
পহেলা বৈশাখ
– প্রসূন গোস্বামী
শব্দের ঝরনাধারা ভেসে আসে পহেলা বৈশাখ,
নবজীবনের সুর বাজে, মন উৎফুল্ল আকাশ।
রঙের ঝলকানিতে ছেয়ে যায় ধরণি,
আনন্দের উৎসবে মুখরিত হয় গানের বাণী।
হে বৈশাখ, তোমার আগমনে বাজুক জীবনের বীণা,
প্রতিটি হৃদয়ে গুঞ্জরিত হোক তোমার সুরের খেয়া।
ফুলের অঞ্জলি তুলে মধুময় বাতাসে,
পাখিরা গান গায়, উড়ে যায় আকাশে।
প্রকৃতির বুকে জাগে নবজাগরণের আবেশ,
শিশুরা খেলে আনন্দে, মাতিয়ে তোলে দেশ।
ওই দেখা যায় বৈশাখের সাজে সেজেছে ধরা,
প্রাণের উৎসবে ভরেছে সবার মনের ঘড়া।
মৃদু স্পর্শে বাতাস, নীল আকাশের নীচে,
প্রজাপতি নৃত্য করে, রঙিন রেণুর মেঘে।
সোনালি ধানের শিষে, বাজে খুশির সুর,
গ্রামের মাঠে মাঠে, উঠুক নতুন ভোর।
বৈশাখের এই নতুন প্রভাতে জাগুক প্রাণ,
প্রতিটি প্রাণে প্রাণে বয়ে যাক নতুনের গান।
নতুন আলোয় ঝলমল করে পৃথিবীর বুক,
বৈশাখের বাতাসে বয়ে আসে নতুন সুখ।
পুরনোকে ছেড়ে যাবার আনন্দে মনে উচ্ছ্বাস,
নতুনের আগমনে ভরে ওঠে আশার আকাশ।
হে বৈশাখ, তুমি নিয়ে এসো নতুনের বার্তা,
প্রতিটি পথে পথে রচিত হোক নতুন কবিতা।
নবজীবনের আশায় হয় মন উদাসী,
বৈশাখের হাওয়ায় মেশে দীর্ঘশ্বাস ভারী।
স্মৃতির পাতায় ম্লান হাসি, অশ্রুর ধারা,
বৈষম্যের বেদনায় হৃদয় বিধে কাঁটা।
তবুও আশার আলো মনে জ্বলে,
নতুন দিনের সূচনা সুন্দর হবে।
বৈশাখের বাতাস বয়ে আনে সুরের উল্লাস,
জীবনে আনন্দ ছড়াবে, দুঃখ হবে বিনাশ।
হে বৈশাখ, তোমার মাঝে খুঁজি আমি নতুন প্রেরণা,
জীবনের পথে পথে তুমি দাও নতুন করে জেগে ওঠার কামনা।
হৃদয় কাঁপে আনন্দে, মুখরিত হয় গান,
বৈশাখ এসেছে নিয়ে নতুন জীবনের প্রাণ।
উচ্ছ্বাসের আলোয় উদ্ভাসিত পৃথিবীর অন্তর,
বৈশাখের উল্লাসিত গানে নাচে গ্রাম ও শহর।
পহেলা বৈশাখ কবিতা সমগ্র
মঙ্গল আলো
এমামুল হক
শুরু হয়েছে আলোর পথের যাত্রা
এ পথেই মিলবে সে গান,
বৈশাখের প্রেম ও উৎসবে,
বাংলার সুরে মিলবে সব প্রাণ।
মেঘের ছায়া ভেঙে হাসছে রবি,
ফুলের মেলায় আজ নতুন সবই
বাধা যতো ভেঙে দাও প্রেমের পথে,
উৎসবে মেতে ওঠো খুশির রথে।
দুঃখের আঁধার আজি ঘুচাও দূরে,
মঙ্গল আলো জ্বালো অন্তরজুড়ে।
আজি এ প্রভাতে উদ্ভাসিত যে রঙ,
সে রং সাম্যের, সে রঙ সমতার;
জাত–ধর্মের শৃঙ্খল ফেলো ঝেড়ে,
অশুভ যাক উড়ে কালবোশাখী ঝড়ে;
নিপাত যাক বীজ সাম্প্রদায়িকতার।
বৈশাখী কবিতা ও ছবি
বৈশাখী কবিতার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১. এসো হে বৈশাখ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।
তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক॥
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে–যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক॥
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।
রসের আবেশরাশি শুষ্ক করি দাও আসি,
আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ।
মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক॥
২. নববর্ষ এল আজি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থঃ কড়ি ও কোমল
নববর্ষ এল আজি
দুর্যোগের ঘন অন্ধকারে;
আনে নি আশার বাণী,
দেবে না সে করুণ প্রশ্রয়।
প্রতিকূল ভাগ্য আসে
হিংস্র বিভীষিকার আকারে;
তখনি সে অকল্যাণ
যখনি তাহারে করি ভয়।
যে জীবন বহিয়াছি
পূর্ণ মূল্যে আজ হোক কেনা;
দুর্দিনে নির্ভীক বীর্যে
শোধ করি তার শেষ দেনা।
৩. বৈশাখ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থঃ কল্পনা
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ!
ধুলায় ধূসর রুক্ষ উড্ডীন পিঙ্গল জটাজাল,
তপঃক্লিষ্ট তপ্ত তনু, মুখে তুলি বিষাণ ভয়াল
কারে দাও ডাক
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ!
ছায়ামূর্তি যত অনুচর
দগ্ধতাম্র দিগন্তের কোন্ ছিদ্র হতে ছুটে আসে!
কী ভীষ্ম অদৃশ্য নৃত্যে মাতি উঠে মধ্যাহ্ন–আকাশে
নিঃশব্দ প্রখর
ছায়ামূর্তি তব অনুচর!
মত্তশ্রমে শ্বসিছে হুতাশ।
রহি রহি দহি দহি উগ্রবেগে উঠিছে ঘুরিয়া,
আবর্তিয়া তৃণপর্ণ, ঘূর্ণচ্ছন্দে শূন্যে আলোড়িয়া
চূর্ণরেণুরাশ
মত্তশ্রমে শ্বসিছে হুতাশ।
দীপ্তচক্ষু হে শীর্ণ সন্ন্যাসী,
পদ্মাসনে বস আসি রক্তনেত্র তুলিয়া ললাটে,
শুষ্কজল নদীতীরে শস্যশূন্য তৃষাদীর্ণ মাঠে
উদাসী প্রবাসী—
দীপ্তচক্ষু হে শীর্ণ সন্ন্যাসী!
জ্বলিতেছে সম্মুখে তোমার
লোলুপ চিতাগ্নিশিখা, লেহি লেহি বিরাট অম্বর,
নিখিলের পরিত্যক্ত মৃতস্তূপ বিগত বৎসর
করি ভস্মসার।
চিতা জ্বলে সম্মুখে তোমার।
হে বৈরাগী, করো শান্তিপাঠ।
উদার উদাস কণ্ঠ যাক ছুটে দক্ষিণে ও বামে,
যাক নদী পার হয়ে, যাক চলি গ্রাম হতে গ্রামে,
পূর্ণ করি মাঠ।
হে বৈরাগী, করো শান্তিপাঠ।
সকরুণ তব মন্ত্রসাথে
মর্মভেদী যত দুঃখ বিস্তারিয়া যাক বিশ্ব– ’পরে,
ক্লান্ত কপোতের কণ্ঠে, ক্ষীণ জাহ্নবীর শ্রান্তস্বরে,
অশ্বত্থছায়াতে—
সকরুণ তব মন্ত্রসাথে।
দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ
তোমার ফুৎকারলুব্ধ ধুলা–সম উড়ুক গগনে,
ভ’রে দিক নিকুঞ্জের স্খলিত ফুলের গন্ধসনে
আকুল আকাশ—
দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশ।
তোমার গেরুয়া বস্ত্রাঞ্চল
দাও পাতি নভস্তলে, বিশাল বৈরাগ্যে আবরিয়া
জরা মৃত্যু ক্ষুধা তৃষ্ণা, লক্ষকোটি নরনারী–হিয়া
চিন্তায় বিকল।
দাও পাতি গেরুয়া অঞ্চল।
ছাড়ো ডাক, হে রুদ্র বৈশাখ!
ভাঙিয়া মধ্যাহ্নতন্দ্রা জাগি উঠি বাহিরিব দ্বারে,
চেয়ে রব প্রাণীশূন্য দগ্ধতৃণ দিগন্তের পারে
নিস্তব্ধ নির্বাক।
হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ!
৪. পুরাতন – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থঃ কড়ি ও কোমল
হেথা হতে যাও, পুরাতন।
হেথায় নূতন খেলা আরম্ভ হয়েছে।
আবার বাজিছে বাঁশি, আবার উঠিছে হাসি,
বসন্তের বাতাস বয়েছে।
সুনীল আকাশ– ‘পরে শুভ্র মেঘ থরে থরে
শ্রান্ত যেন রবির আলোকে,
পাখিরা ঝাড়িছে পাখা, কাঁপিছে তরুর শাখা,
খেলাইছে বালিকা বালকে।
সমুখের সরোবরে আলো ঝিকিমিকি করে,
ছায়া কাঁপিতেছে থরথর,
জলের পানেতে চেয়ে ঘাটে বসে আছে মেয়ে,
শুনিছে পাতার মরমর।
কী জানি কত কী আশে চলিয়াছে চারি পাশে
কত লোক কত সুখে দুখে,
সবাই তো ভুলে আছে, কেহ হাসে কেহ নাচে,
তুমি কেন দাঁড়াও সমুখে।
বাতাস যেতেছে বহি, তুমি কেন রহি রহি
তারি মাঝে ফেল দীর্ঘশ্বাস।
সুদূরে বাজিছে বাঁশি, তুমি কেন ঢাল আসি
তারি মাঝে বিলাপ–উচ্ছ্বাস।
উঠেছে প্রভাত–রবি, আঁকিছে সোনার ছবি,
তুমি কেন ফেল তাহে ছায়া।
বারেক যে চলে যায় তারে তো কেহ না চায়,
তবু তার কেন এত মায়া।
তবু কেন সন্ধ্যাকালে জলদের অন্তরালে
লুকায়ে ধরার পানে চায়–
নিশীথের অন্ধকারে পুরানো ঘরের দ্বারে
কেন এসে পুন ফিরে যায়।
কী দেখিতে আসিয়াছ! যাহা কিছু ফেলে গেছ
কে তাদের করিবে যতন।
স্মরণের চিহ্ন যত ছিল পড়ে দিন–কত
ঝরে–পড়া পাতার মতন
আজি বসন্তের বায় একেকটি করে হায়
উড়ায়ে ফেলিছে প্রতিদিন
ধূলিতে মাটিতে রহি হাসির কিরণে দহি
ক্ষণে ক্ষণে হতেছে মলিন।
ঢাকো তবে ঢাকো মুখ, নিয়ে যাও দুঃখ সুখ,
চেয়ো না চেয়ো না ফিরে ফিরে।
হেথায় আলয় নাহি, অনন্তের পানে চাহি
আঁধারে মিলাও ধীরে ধীরে
৫. নববর্ষে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থঃ চিত্রা
নিশি অবসানপ্রায়, ওই পুরাতন
বর্ষ হয় গত!
আমি আজি ধূলিতলে এ জীর্ণ জীবন
করিলাম নত।
বন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে কেহ রও,
ক্ষমা করো আজিকার মতো
পুরাতন বরষের সাথে
পুরাতন অপরাধ যত।
আজি বাঁধিতেছি বসি সংকল্প নূতন
অন্তরে আমার,
সংসারে ফিরিয়া গিয়া হয়তো কখন
ভুলিব আবার।
তখন কঠিন ঘাতে এনো অশ্রু আঁখিপাতে
অধমের করিয়ো বিচার।
আজি নব–বরষ–প্রভাতে
ভিক্ষা চাহি মার্জনা সবার।
আজ চলে গেলে কাল কী হবে না–হবে
নাহি জানে কেহ,
আজিকার প্রীতিসুখ রবে কি না–রবে
আজিকার স্নেহ।
যতটুকু আলো আছে কাল নিবে যায় পাছে,
অন্ধকারে ঢেকে যায় গেহ–
আজ এসো নববর্ষদিনে
যতটুকু আছে তাই দেহ।
বিস্তীর্ণ এ বিশ্বভূমি সীমা তার নাই,
কত দেশ আছে!
কোথা হতে কয় জনা হেথা এক ঠাঁই
কেন মিলিয়াছে?
করো সুখী, থাকো সুখে প্রীতিভরে হাসিমুখে
পুষ্পগুচ্ছ যেন এক গাছে–
তা যদি না পার চিরদিন,
একদিন এসো তবু কাছে।
সময় ফুরায়ে গেলে কখন আবার
কে যাবে কোথায়,
অনন্তের মাঝখানে পরস্পরে আর
দেখা নাহি যায়।
বড়ো সুখ বড়ো ব্যথা চিহ্ন না রাখিবে কোথা,
মিলাইবে জলবিম্ব প্রায়–
একদিন প্রিয়মুখ যত
ভালো করে দেখে লই আয়!
আপন সুখের লাগি সংসারের মাঝে
তুলি হাহাকার!
আত্ম–অভিমানে অন্ধ জীবনের কাজে
আনি অবিচার!
আজি করি প্রাণপণ করিলাম সমর্পণ
এ জীবনে যা আছে আমার।
তোমরা যা দিবে তাই লব,
তার বেশি চাহিব না আর।
লইব আপন করি নিত্যধৈর্যতরে
দুঃখভার যত,
চলিব কঠিন পথে অটল অন্তরে
সাধি মহাব্রত।
যদি ভেঙে যায় পণ, দুর্বল এ শ্রান্ত মন
সবিনয়ে করি শির নত
তুলি লব আপনার ‘পরে
আপনার অপরাধ যত!
যদি ব্যর্থ হয় প্রাণ, যদি দুঃখ ঘটে–
ক’দিনের কথা!
একদা মুছিয়া যাবে সংসারের পটে
শূন্য নিষ্ফলতা।
জগতে কি তুমি একা? চতুর্দিকে যায় দেখা
সুদুর্ভর কত দুঃখব্যথা।
তুমি শুধু ক্ষুদ্র একজন,
এ সংসারে অনন্ত জনতা।
যতক্ষণ আছ হেথা স্থিরদীপ্তি থাকো,
তারার মতন।
সুখ যদি নাহি পাও, শান্তি মনে রাখো
করিয়া যতন।
যুদ্ধ করি নিরবধি বাঁচিতে না পার যদি,
পরাভব করে আক্রমণ,
কেমনে মরিতে হয় তবে
শেখো তাই করি প্রাণপণ।
জীবনের এই পথ, কে বলিতে পারে
বাকি আছে কত?
মাঝে কত বিঘ্নশোক, কত ক্ষুরধারে
হৃদয়ের ক্ষত?
পুনর্বার কালি হতে চলিব সে তপ্ত পথে,
ক্ষমা করো আজিকার মতো–
পুরাতন বরষের সাথে
পুরাতন অপরাধ যত।
ওই যায়, চলে যায় কালপরপারে
মোর পুরাতন।
এই বেলা, ওরে মন, বল্ অশ্রুধারে
কৃতজ্ঞ বচন।
বল্ তারে– দুঃখসুখ দিয়েছ ভরিয়া বুক,
চিরকাল রহিবে স্মরণ,
যাহা–কিছু লয়ে গেলে সাথে
তোমারে করিনু সমর্পণ।
ওই এল এ জীবনে নূতন প্রভাতে
নূতন বরষ–
মনে করি প্রীতিভরে বাঁধি হাতে হাতে,
না পাই সাহস।
নব অতিথিরে তবু ফিরাইতে নাই কভু–
এসো এসো নূতন দিবস!
ভরিলাম পুণ্য অশ্রুজলে
আজিকার মঙ্গলকলস।
পহেলা বৈশাখ নিয়ে নির্মলেন্দু গুণের কবিতা
সূর্য সত্য, চন্দ্র সত্য, সত্য নববর্ষ
আমার কবিতায় বহুরূপে বহুবার সূর্যের প্রসঙ্গ
এসেছে। তার মানে এই নয় যে, আমি খুব সূর্য-
প্রেমিক বা আমি সূর্যকে খুব ভালোবাসি।
তুলনামূলকভাবে সূর্যের চেয়ে চাঁদই বরং আমাকে
আনন্দ দিয়েছে বেশি। আমার কবিতায়, আমার
গানের মধ্যে আমি সূর্যের চেয়ে চাঁদের কথাই
বেশি বলেছি।
‘ও আমি রাগ করেছি চাঁদের সাথে,
মুখখানি সে দেয়নি ছুঁতে আমার হাতে।’
বিশেষত পূর্ণিমার রাতে আকাশের চাঁদ
আমার খুব ভালো লাগে। ভীষণ, ভীষণ।
আকাশ উন্মাদ করা চাঁদের স্নিগ্ধরূপ
আমি লুকিয়ে-লুকিয়ে দেখি, একা একা।
একদিন গভীর রাতে, বিশ্ব যখন নিদ্রামগ্ন,
গগন মেঘে ভরা, তখন চাঁদ আমাকে,
সবার সামনে বলা যায় না এমন একটা ইঙ্গিত দিয়েছে।
আমি তার ইঙ্গিতের প্রতি আস্থা স্থাপন করে
চন্দ্রপৃষ্ঠে একটি ছোট্ট বাংলোবাড়ি তৈরি করেছি।
আমার মৃত্যু হলে, যদি কখনও হয়, হতেও তো পারে।
মৃত্যু কি কখনও কোনো জীবনকে ছাড়ে?
তখন আমি কোথায় যাবো?
ভাগ্যিস চাঁদ নামমাত্র মূল্যে তার আট শতাংশ জমি
আমাকে লিজ দিয়েছিল। তা না হলে ওরকম পশ এলাকায়
আমার কবিতাকুঞ্জ গড়া কখনও সম্ভব হতো না।
আমি জানি, সূর্যের চেয়ে চাঁদের ক্লাইমেটই আমার স্বাস্থ্যের
জন্য উপযোগী হবে।
তবে আপনারা ভুল বুঝবেন না আমাকে।
আমি সূর্যকেও ভালোবাসি, কম আর বেশি।
তার তেজ খুব বেশি হলেও,
তার প্রতি আস্থা আমার কম নয় মোটেও।
আমি জানি, আমি তাকে খুব প্রেমচোখে না দেখলেও,
তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা অবিচল।
আমি জানি মেঘে, ঝড়ে বা ঘন কুয়াশায় যদি ঢেকে যায়
ই সৌরজগৎ, তারপরও সূর্য উঠবেই।
তার তো অমাবস্যার ছুটি নেই,
নেই পূর্ণিমার চাঁদের মতো মাসিক-উল্লাস। কক্ষপথে ধাবমান
চঞ্চল চন্দ্রের মতো সে নয়। মহান বিজ্ঞানী
গ্যালিলিওর মতোই সে আপন অবস্থানে
এবং আপন বিশ্বাসে স্থির, দীপ্যমান।
আমি বিশ্বাস করি, যতদিন আকাশ আছে,
যতদিন চাঁদ আছে আকাশে—যতদিন রবে
পদ্মা-মেঘনা, গৌরী-গঙ্গা বহমান, ততদিন রবে
আকাশে সূর্য, মাটিতে শেখ মুজিবুর রহমান।
আর আমি? আমার গন্তব্যের কথা তো আমি
আগেই বলেছি। আমি চলে যাবো চাঁদের নদীর
তীরে তৈরি করা আমার কবিতাকুঞ্জে। সেখানে
আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে কবিতার মতো
এক চন্দ্রমুখী নারী।
আমি বিশ্বাস করি, মহাকাশে যত বিপর্যয়ই
ঘটুক না কেন,
কাল সকালে পুবের আকাশে সূর্য উঠবেই এবং
বাঙালি সাড়ম্বরে পালন করবেই তাদের প্রিয় নববর্ষ।
আমি তাকে উঠতেও দেখি না, ডুবতেও দেখি না বহুদিন।
তবু আমি সর্বপাপঘ্ন সূর্যকে বিশ্বাস করি এবং তাকে
মহাবিশ্বের সকল শক্তির অনন্য উৎস বলে মানি।
পহেলা বৈশাখ নিয়ে কবিতা
বছর ঘুরে আবার এলো পহেলা বৈশাখ
– ফাইছুল আলম নাছিম
বছর ঘুরে আবার এলো পহেলা বৈশাখ,
চারিদিকে আজ বাজছে ঢোলক, বাজছে দেখ ঢাক।
আজ বাংলা সেঁজেছে দেখ বৈশাখী সব সাঁজে
আজ বাঙালীর বুকের মাঝে সুরের বাদ্য বাজে।
আজ সকলে উঠেছে মেতে আনান্দের এক উৎসবে,
জাতি ধর্ম বর্ণ গোত্র সকল বিভেদ ভুলে।
আজ সকলের মনের মাঝে গাইছে সুখের গীতি
ধনী গরীব সকলেরই মাঝে বারুক সম্প্রীতি।
আজ সকলে কাঁধ মিলিয়ে করছে মঙ্গল যাত্রা
পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ুক বাঙালীর জয়যাত্রা।
পহেলা বৈশাখের স্ট্যাটাস
“নতুন বছরের নতুন সকাল,
মুছে যাক সব দুঃখ–জরাকাল।
হাসি–ভালোবাসায় কাটুক প্রতিটা দিন—
“শুভ পহেলা বৈশাখ!
আনন্দে, রঙে আর হাসিতে ভরে উঠুক আজকের দিনটি।
নতুন বছরে হোক নতুন শুরু!”
“এসো হে বৈশাখ, এসো এসো!
পুরনো গ্লানি ধুয়ে যাক, আসুক নতুনের আলোক।
“বছর পাল্টায়, সময় যায়…
তুমি থেকো পাশে, এটাই চাওয়া।
পহেলা বৈশাখের বাণী
এসো হে বৈশাখ, এসো এসো
ফকির বাবার ঝাড়ফুঁক দিয়ে
রোগীদের রোগ দাও সারিয়ে
সারা বছরের গুনাহ দূর হয়ে যাক
যাক যাক
এসো এসো…
যাক দূর হয়ে কষ্টের স্মৃতি
যাক ছ্যাঁকা খাওয়া প্রেম প্রীতি
যাক মুছে চোখের পানি সুদূরে মিলাক
যাক যাক
এসো এসো…
মুছে যাক দুঃখ ঘুচে যাক খরা
বৃষ্টির পানিতে পবিত্র হোক ধরা
সুরের আবেশ রাশি
ঢেলে দাও বাসায় আসি
বাজাও বাজাও, হগলে মিলে আনন্দের ঢাক
ঝগড়াঝাটি মারামারি পরচর্চা যাক, দূরে যাক
যাক যাক
এসো এসো…
“ ফিরে ফিরে বারবার সে এসেছে
প্রতিটি বারে সেই সে নবীন
পহেলা বৈশাখ…
শুভকামনায় নববর্ষ রঙিন ”
“তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।
এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো“