Ramjan

সাহাবাদের রমজান পালন কিভাবে ছিল

সাহাবাদের (রাঃ) রমজান পালন অত্যন্ত ইবাদতবন্দেগি, তাকওয়া আত্মসংযমে পরিপূর্ণ ছিল। তারা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শিক্ষা অনুযায়ী রমজান পালন করতেন এবং মাসকে আত্মশুদ্ধির বিশেষ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতেন। তাদের রমজান পালন কেমন ছিল তা নিম্নে তুলে ধরা হলো:

সাহাবাদের রমজান পালন

সাহাবীগণ তাকওয়া আত্মশুদ্ধি অতি গভীর মনোনিবেশ করতেন

সাহাবারা রমজানকে শুধুমাত্র সিয়াম (রোজা) রাখার মাস মনে করতেন না, বরং এটাকে আত্মশুদ্ধি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতেন। তারা গুনাহ থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে বিশেষভাবে যত্নবান থাকতেন এবং নিজেদের চরিত্রকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করতেন।

গভীরভাবে কোরআন তেলাওয়াত কুরআন পড়তেন

সাহাবারা রমজান মাসে কুরআন তিলাওয়াতের পরিমাণ বহুগুণে বৃদ্ধি করতেন। তারা রমজানের সময় কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করতেন তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করতেন।

সাহাবীগণ তারাবি রাতের ইবাদত গভীরভাবে করতেন

রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সময় থেকেই সাহাবারা তারাবিহ নামাজ আদায় করতেন, যদিও প্রথম দিকে তা নফল হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে পড়া হতো। তারা রাতের দীর্ঘ অংশ নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত দোয়াইস্তিগফারে কাটাতেন।

সাহাবীগণ সাধারণ মানুষের প্রতি দয়া দানশীল ছিলেন

রমজান মাসে তারা দানসদকা এবং গরিবদুঃখীদের সাহায্যে নিজেদেরকে ব্যাপৃত রাখতেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ছিলেন সবচেয়ে দানশীল ব্যক্তি, আর সাহাবারা তার অনুসরণে দানসদকা দুঃস্থদের খাবার খাওয়ানোর ব্যাপারে অগ্রগামী থাকতেন।

সাহাবীগণ ইফতার সেহরের গুরুত্ব

সাহাবারা রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নাহ অনুসারে সেহরি ইফতার করতেন এবং তা বিলম্ব না করে যথাসময়ে খেতেন। তাঁরা খুবই সাধারণ কম পরিমাণে খাবার গ্রহণ করতেন, যাতে ইবাদতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।

সাহাবীগণ জিহাদ কর্মব্যস্ততা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন

রমজান মাসে সাহাবারা অলস হয়ে বসে থাকতেন না, বরং তারা ইসলাম প্রচার, জিহাদ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজেও ব্যস্ত থাকতেন। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ ( হিজরি) এবং মক্কা বিজয় ( হিজরি) – দুটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধই রমজান মাসে সংঘটিত হয়েছিল, যা তাদের কর্মশক্তি ধৈর্যের প্রমাণ বহন করে।

সাহাবীগের রমজানের শেষ দশকের আমলগুলো করতেন

তারা শেষ দশকে ইবাদত আরও বাড়িয়ে দিতেন এবং ইতিকাফ করতেন।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শেষ দশকে মসজিদে ইতিকাফ করতেন, এবং সাহাবারা তার অনুসরণ করতেন।

 সাহাবীগণ  কিভাবে রমজানের প্রস্তুতি নিবেন

সাহাবারা (রাঃ) রমজানকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করতেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে এই বরকতময় মাসের প্রস্তুতি নিতেন। তারা শুধু রমজান আসার পর ইবাদত বাড়িয়ে দিতেন না, বরং আগেভাগেই আত্মিক, শারীরিক মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। তাদের প্রস্তুতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিম্নে তুলে ধরা হলো

ছয় মাস আগে থেকেই রমজানের জন্য দোয়া করা

  • সাহাবায়ে কেরাম ছয় মাস ধরে দোয়া করতেন, হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।
  1. শাবান মাসে বেশি নফল রোযা রাখা
  • রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শাবান মাসে অধিক নফল রোযা রাখতেন, আর সাহাবারা তার অনুসরণ করতেন।

. আত্মশুদ্ধি গুনাহ থেকে বিরত থাকার অনুশীলন

সাহাবারা রমজানের আগে থেকেই গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার কঠোর অনুশীলন করতেন। তারা নিজেদের নফসকে সংযত রাখার জন্য বেশি বেশি ইবাদত করতেন, যাতে রমজান শুরু হওয়ার সাথে সাথে পূর্ণভাবে আত্মনিয়োগ করা সহজ হয়।

. কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা

  • তারা কুরআন তিলাওয়াত, তাদাব্বুর (গভীর চিন্তা) আমল করার প্রতি বেশি মনোযোগ দিতেন।

. গরিবদুঃখীদের সাহায্যের প্রস্তুতি

সাহাবারা রমজানের আগেই তাদের দানসদকার পরিকল্পনা করতেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ছিলেন সবচেয়ে দানশীল ব্যক্তি, আর রমজানে তার দানশীলতা আরও বেড়ে যেত (বুখারি, মুসলিম)

. রমজানে কর্মক্ষম থাকার মানসিক শারীরিক প্রস্তুতি

রমজান যেন অলসতার সময় না হয়, তাই সাহাবারা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতেন যাতে রমজানেও তারা কর্মশীল থাকতে পারেন।

. ইতিকাফ শেষ দশকের ইবাদতের পরিকল্পনা

সাহাবারা আগেভাগেই ঠিক করতেন যে তারা শেষ দশকে ইতিকাফ করবেন এবং রমজানের শেষ অংশকে আরও গুরুত্ব সহকারে পালন করবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button