পহেলা বৈশাখ ২০২৫ ঢাকায় ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত প্রধান অনুষ্ঠান সমূহ

পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির প্রধান একটি প্রধান অনুষ্ঠান সমূহ মধ্যে বাংলা নববর্ষ অর্থাৎ বাংলা বছরের প্রথম দিন। এই দিনে তা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় নানা রকম আয়োজন করা হয়ে থাকে। এটি শুধু একটা উৎসবে নয় বরং জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত। আসুন ঢাকার কোন কোন স্থানে এবং দেশের কোন কোন স্থানে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বড় ধরনের সবার আয়োজন করা হয় তাদের তালিকা দেখে নেওয়া যাক।
ঢাকায় যে সকল জায়গায় বৈশাখের আয়োজন করা হয়
ঢাকার মধ্যে নিচের জায়গাগুলোতে পহেলা বৈশাখের রাষ্ট্রীয় এবং ব্যক্তিগত এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আয়োজন করা হয় তাদের একটি তালিকা দেখতে পাবেন।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রমনা বটমলে ছায়া নোটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান
- পহেলা বৈশাখ সকালবেলায় বটমলে রবীন্দ্র সংগীত নজরুল সংগীত ও অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী গান পরিবেশন করা হয়ে থাকে।
- পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ায় নোটের এই আয়োজনগুলো ভাই আসছে।
- পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে প্রত্যেক বছর এই দিনে হাজারো মানুষ এখানে সমাগত হয় এবং গাওয়া ও শোনার মধ্য দিয়ে এবং কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে থাকে।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদে)
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাংলাদেশের একটি সর্ববৃহৎসবরণ শোভাযাত্রা এখানে অনুষ্ঠিত হয়
- পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে এখানে মুখোশ, অন্য প্রাণীর প্রতিকৃতি, রঙ্গিন ব্যানার ও প্রতীক নিয়ে বন্যার্ত মিছিল ও রেলি করা হয়ে থাকে।
- পহেলা বৈশাখে জাতীয় সংগীত ইউনেস্কো 2016 সালের একটি আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন।
- পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাংলায় একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন
- পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে প্রত্যেক বছর বাংলায় একাডেমিতে সাহিত্য আলোচনা ও বইমেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে এবং সেখানে সকল তরুণ ও প্রবীণ লেখকের বই এর মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
- তাছাড়া বাংলায় একাডেমী শিল্পকলাতে নাটক, সংগীত বিবেচনা ও কবিতা আবৃতি সহ সকল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বৈশাখী মেলার আয়োজন
- পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শহরে উদ্যান এর বড় পরিসরে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয় যেখানে হস্তশিল্প মাটির তৈরি জিনিসপত্র দেশীয় পোশাক মিষ্টির আয়োজন সহ সকল দেশীয় পণ্যের সমাহার।
- পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যেমন ধানমন্ডি গুলশান ও উত্তরা সহ সকল স্থানের ছোট ছোট বৈশাখী মেলা আয়োজন করা হয়।
- পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে হালখাতার আয়োজন
- পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ওসাইরা পুরানো পুরাতন হিসাব বন্ধ করে নতুন হিসাব খোলার লক্ষ্যে হালখাতার আয়োজন করে থাকে এবং মিষ্টি বিতরণ করে থাকে।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে টেলিভিশন রেডিওতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন
- প্রত্যেক বছর পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং রেডিও চ্যানেল দিনব্যাপী পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান এবং আবৃতি সহ সকল শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
- পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সকল টেলিভিশন চ্যানেল এবং রেডিওতে বিশেষ নাটক গান ও বৈশাখী রেসিপি শো প্রচারিত হয়ে থাকে।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশের অন্যান্য স্থানে নববর্ষের আয়োজন
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশের অন্যান্য যে সকল স্থানে বড় শহরে পহেলা বৈশাখের আয়োজন করা হয় তাদের একটি তালিকা সংক্ষিপ্ত আকারে নিচে প্রদান করা হলো।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চট্টগ্রামে নববর্ষের আয়োজন উদযাপন
- পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও লেকে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয় এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
- চট্টগ্রামের বিবর্ণ সংগঠন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গুলি আর নাচ ওনারা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই দিনটাকে বরণ করে নেয়।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাজশাহীতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন
- শুভ নববর্ষ উপলক্ষে পদ্মা নদীর তীরে সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান ও বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
- তাছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উত্তেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখ মেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে।
নববর্ষ উপলক্ষে খুলনা ও বরিশালে বৈশাখ মেলার আয়োজন উদযাপন
- পহেলা বৈশাখে উপলক্ষে খুলনায় রুপসি নদীর তীরে শোভাযাত্রা সঙ্গীতা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়ে থাকে।
- পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীরে বর্ষবরণ আর আয়োজন করা হয়ে থাকে।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সিলেটের বৈশাখী মেলা আয়োজন
- পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সিলেটে হযরত শাহজালাল আঃ এর মাজারের সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন জায়গায় মেলার আয়োজন এবং অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়ে থাকে।
- শুভ নববর্ষ উপলক্ষে চা বাগান এলাকায় বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে এবং এখানে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিপন্ন অনুষ্ঠান এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পার্টির সমাহার হয়ে থাকে।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কক্সবাজার এবং পার্বত্য জেলার বস্য বড় আয়োজন
- পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মেলার আয়োজন এবং সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
- পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাঙ্গামাটি বান্দরবান খাগড়াছড়িতে চাকমা মারমা ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সহ অন্যান্য আয়োজন করে থাকে এবং তাদের নতুন নতুন পণ্য ও জিনিসপত্রের সমাহার সম্বলিত একটা মেলা আয়োজন করে থাকে।
পহেলা বৈশাখের বৈশিষ্ট্য
পহেলা বৈশাখ বাঙালি ভাষাভাষীগণ বা বাংলা ভাষা গোষ্ঠীর জনগণ অত্যান্ত সাদাসিধ ভাবে পাঞ্জাবী ও পায়জামা পরে জনগোষ্ঠীর আকার ধারণ করে পালন করেছে। যেমন :
পহেলা বৈশাখের দিনে মানুষ নতুন জামা পরে, মেলায় ঘোরাফেরা করে, সংস্কৃতি অনুষ্ঠান আয়োজন করে এবং দেখে ও খাওয়া দাওয়া পান্তা ভাতের আয়োজন এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
বাঙালি ভাষা গোষ্ঠীর ঐতিহ্য সংস্কৃতির সকল ধরনের এই দিনই উদযাপন করা হয়ে থাকে।
১. মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন করা
- পয়লা বৈশাখের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয় এবং পহেলা বৈশাখের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
- পহেলা বৈশা ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু করা হয় এবং বিভিন্ন বর্ণের মুখোশ, পুতুল, হাতি ও ঘোড়ার প্রত্যেকটি ও ব্যানার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- পহেলা বৈশাখ কে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো ২০১৬ সালে এবং সাংস্কৃত ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
২. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়
- পহেলা বৈশাখের দিন সকালবেলা রমনার বট বলে এর ঐতিহ্যবাহী পরিবেশন এর মধ্য দিয়ে শুরু হয়।
- রবীন্দ্র সংগীত লোকসংগীত বাউল গান জারি সারি গান নাটক ও নিত্য পরিবেশন করা হয়ে থাকে।
- এই দিনে টেলিভিশন রেডিওতে দিনব্যাপী বিশেষ পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়ে থাকে।
৩. বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়
- পয়লা বৈশাখের দিন শহর ও গ্রামে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয় যেখানে মাটির খেলনা, পুতুল, লোকজ সামগ্রী সহ বিভিন্ন ধরনের পহেলা বৈশাখের উপকরণ পাওয়া যায়।
- পয়লা বৈশাখের দিন মেলায় নাগরদোলা, পুতুল নাচ, সার্কাস ও লাঠি খেলা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়েছে।
- মেলায় জনগোষ্ঠীর দ্বারা পিঠাপুলি মিষ্টি ও দেশে খাবারের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
৪. পান্তা ভাত ইলিশ খাওয়ার আয়োজন
এই দিনে পহেলা বৈশাখের প্রধান আকর্ষণ পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ ও আলুর ভর্তা আর ওর সবজি সবই বিবর্ণ খাবার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
৫. নতুন পোশাক পরিধান করা হয়
- এই দিনে সকল বাঙ্গালীর মধ্যে ধানের করা যায় এবং লাল সাদা রংয়ের পোশাক পরিধান করে।
- মেয়েরা সাদা শাড়ি ও লাল কাপড় এবং কপালের টিপ পরে এবং ছেলেরা সাদা পাঞ্জাবি ও ফতুয়া পরে উৎসবের আয়োজন করে থাকে।
৬. হালখাতার আয়োজন করা হয়
- পহেলা বৈশাখের দিন ব্যবসায়ীরা পুরাতন হিসেব বন্ধ করার জন্য পুরাতন বকেয়াকে হিসাব খোলার জন্য হালখাতার আয়োজন করে থাকে।
- পহেলা বৈশাখের দিন দোকানে দোকানে ক্রেতাদের মিষ্টি বিতরণ ও আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়।
- এই দিনে ব্যবসায়ীরা নতুন বছরের সূচনার প্রতি হিসাব উদযাপন করে।
৭. গ্রামীণ খেলাধুলা ও বিনোদনের আয়োজন
পয়লা বৈশাখের দিনে গ্রামের গরুর দৌড, নৌকা বাইচ, লাঠি খেলা, কুস্তি ও মোরগ লড়াই বশির খেলা সবই খেলার আয়োজন করে উৎসবমুখর ভাবে দিনটি পালন করা হয় তাকে।