পেটে ব্যাথা হলে কি করবেন | পেটে ব্যাথা কমানোর উপায়

হঠাৎ করে পেটে ব্যথা হলে কি করা উচিত?. পেটের ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে. কিছু না হঠাৎ পেটে ব্যথা হলে বেতার তরঙ্গের আগে বুঝতে হবে. পেটের ব্যথা গ্যাস ব্যাথ্যা কিনা অন্য কোন ব্যাথা. প্রয়োজন হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে. নিচে পেটের ব্যথার কারণ গুলি কি ও পেটের ব্যথা হলে কি করা উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পেটের ব্যথার কারণ গুলি কি কি?
যে সকল কারণে পেটের ব্যথা হতে পারে সেই সকল কারনে লক্ষণ গুলো নিচে ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরা হলো
- পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা সাধারণত পেটের ওপর দিকে মাঝখানে শুরু হয়।
- এটি হতে পারে খালি পেটে, কখনো চিনচিনে, আবার কখনো জ্বালাপোড়া করতে পারে।
- পেটের উপরের ডান দিকে ব্যথা হলে পিত্তথলির প্রদাহ বা পাথর থাকলে হতে পারে। ব্যথার সাথে সাথে বমিও হতে পারে। এক্ষেত্রে চর্বি জাতীয় খাবার গুলো পরিত্যাগ করতে হবে।
- পেটের ওপরের দিকে ডান অথবা বাঁ কিডনিতে পাথর, প্রদাহ বা সংক্রমণ হলে সেই পাশে ও পেছনে ব্যথা হয়। এই ব্যথা ক্রমেই নিচে নেমে তলপেটেও ছড়ায়। কিডনির ব্যথা প্রচণ্ড তীব্র হয়, একটু পরপর ছাড়ে, আবার আসে। সঙ্গে বমি, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর থাকতে পারে।
- নাভির মাঝখান থেকে ব্যথা যদি ক্রমেই তলপেটের ডান দিকে ছড়িয়ে যায়, সেখানে হাত দিলেই ব্যথা হয়, ধীরে ধীরে তীব্রতা বাড়তে থাকে, তাহলে তা অ্যাপেন্ডিসাইটিস কি না, ভাবতে হবে।
- তলপেটে ব্যথার সঙ্গে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া ও জ্বর প্রস্রাবের সংক্রমণ নির্দেশ করে। মেয়েদের জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের নানা সমস্যায় ব্যথা হতে পারে।
- সাধারণ আমাশয়, ফুড পয়জনিং ও বদহজম থেকে ব্যথা পেটজুড়ে থাকে। বমি বমি ভাব, পেটে শব্দ, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি হয়। আবার কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও পেটে ব্যথা হয়।
- দীর্ঘদিনের পেটের ব্যথার সঙ্গে ওজন হ্রাস, রক্তশূন্যতা, দুর্বলতা ইত্যাদি সতর্কসংকেত। অন্ত্রে ক্যানসার বা টিবিরও লক্ষণ এই পেটে ব্যথা। তাই পেটের ব্যথাকে ছোট করে দেখবেন না।
পেটে ব্যাথা কমানোর উপায়
পেটে ব্যাথা হলে ভারি ও বেশি মসলাজাতীয় খাবার পরিহার করে একটু নরম করে ভাত খেতে পারেন। তাছাড়াও একটু হালকা ও পাতলা জাতীয় খাবার খেতে পারেন। তেল জাতীয় খাবার পরিহার করুন। তেল ছাড়া রুটি খাওয়া যেতে পারে।
পেট ব্যাথা দূর করার অসাধারণ কৌশল
পেট ব্যাথা খুবই যন্ত্রণায় সমস্যা এবং ব্যথা শুরু হলে সহজে কমতেছে না। এক্ষেত্রে আপনি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাবেন না। তবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে পেটের ব্যাথা দূর করার কিছু কৌশল রয়েছে যা নিচে তুলে ধরা হলো
(১) হজম সমস্যা এবং অরুচি জনিত পেটে ব্যথা আদা স্লাইস করে কেটে নিন। এরপর লেবুর রসে লবন মিশিয়ে তাতে আদা ডুবিয়ে রাখুন খানিকক্ষণ। এরপর এই আদা রোদে শুকিয়ে নিন। প্রতিবেলা খাবার পর এই আদা খেলে পেটে ব্যথা দূর হবে চিরকালের মতো।
(২) অ্যাসিডিটি ও গ্যাসের জ্বালাপোড়ার ব্যথা ২০ টি কিশমিশ ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন সারারাত। সকালে উঠে কিশমিশগুলো পিষে খেয়ে নিন খালি পেটে। এতে পেট ঠাণ্ডা হবে এবং অ্যাসিডিটি ও গ্যাসের জ্বালাপোড়ার ব্যথা থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
(৩) ডায়রিয়া ও ডিসেন্ট্রি জনিত ব্যথা ১ কাপ পরিমাণে বেদানার রস প্রতিদিন ২ বার পান করুন। এতে পেটে ব্যথা তো দূর হবেই সেই সাথে দূর হবে ডায়রিয়ার সমস্যা।
(৪) কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার কারণে পেটে ব্যথার সমস্যা ১ চা চামচ ত্রিফলা কুসুম গরম পানিতে মিলিয়ে প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে পান করুন। এতে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে। এবং পেটে ব্যথার সমস্যা এমনকি গ্যাস, অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকেও রেহাই দেবে।
(৫) নারীদের মাসিক জনিত পেটে ব্যথা অনেকেই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। এই সমস্যা সমাধানে ১ মুঠো তুলসি পাতা ছেঁচে রস বের করে নিন এবং ২ চা চামচ তুলসি পাতার রস ১ কাপ কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে ৩ বার পান করুন। বেশ ভালো উপশম হবে।
পেট ব্যথা কমানোর দোয়া
হঠাৎ পেটে চিনচিনে ব্যাথা। কি করবেন জানিনা। প্রয়োজনীয় ঔষধ ও চিকিৎসা নেওয়ার আগে পেট ব্যথা কিছুটা কমানো দরকার। এজন্য চিকিৎসা নিতে ইসলাম পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন দোয়া ও আমল হাদীস শরীফে রয়েছে যা করলে তাৎক্ষণিক পেটের ব্যথা কমে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম থেকে প্রচুর দোয়া আমল হাদীসে বর্ণিত রয়েছে
পেট ব্যথায় যে দোয়া পড়বেন
উসমান ইবনে আবুল আস আস-সাকাফি (রা.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত রয়েছে, তিনি একবার রাসুল (সা.)-এর কাছে পেটের ব্যথার কথা জানান। তিনি বলেন, ব্যথা আমাকে অস্থির করে তুলেছে। তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি তোমার ব্যথার স্থানে ডান হাত রেখে তিনবার বিসমিল্লাহ বোলো। এরপর সাতবার বোলো-
أعوذُ باللهِ و قُدرتِه من شرِّ ما أَجِدُ و أُحاذِرُ
উচ্চারণ : ‘আউজু বি-ইজ্জাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু।’
অর্থ : আল্লাহর মর্যাদা ও তার কুদরতের উসিলায় আমি যা অনুভব এবং ভোগ করছি, তা থেকে মুক্তি চাচ্ছি।
উসমান (রা.) বলেন,
সুস্থ হওয়ার দোয়া
আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো রকম অসুস্থতা অনুভব করে অথবা কোনো ভাই অসুস্থতা কিংবা অস্বাভাবিকতা অনুভ করে; তখন সে যেন এই দোয়াটি পড়ে, তাহলে সে সুস্থ হয়ে যাবে-
ربنا الله الذي في السماء تقدس اسمك، أمرك في السماء والأرض، كما رحمتك في السماء فاجعل رحمتك في الأرض، اغفر لنا حوبنا وخطايانا أنت رب الطيبين، أنزل رحمة من رحمتك وشفاء من شفائك على هذا الوجع
উচ্চারণ : রাব্বুনাল্লাহুল লাজি ফিস সামা-ই তাকাদ্দাসা ইসমুক, আমরুকা ফিস সামা-ই ওয়াল আরদ্ব, কামা রাহমাতুকা ফিস সামা-ই, ফাজআল রাহমাতুকা ফিল আরদ্ব, ইগফির লানা হুউবানা ওয়া খাতা-য়া-না আনতা রাব্বুত তাইয়িবিন, আনযিল রাহমাতাম মিন রাহমাতিকা, ওয়া শিফাউম মিন শিফা-ইকা আলা হাজাল ওয়াজ-ই
পেট ব্যথা কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
পেট ব্যাথা কমবেশি সবার পরিচিত এবং একটি সাধারন ব্যথা। পেট ব্যাথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তবে প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া প্রকৃতিতে পেট ব্যাথা দূর করার অনেক উপায় রয়েছে। ডিসি ঘরোয়া পদ্ধতিতে পেট ব্যথা দূর করার উপায় গুলি:
আদা বা আদা চা
প্রাথমিকভাবে পেট ব্যাথা দূর করতেই আদা বা আদা চা খেলে পেট ব্যাথা কমে যায়।
এতে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ও প্রদাহ বিরোধী গুণ থাকায় এটি ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।
কলা ও আপেল
কলা ও আপেল প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে। একারণেই এগুলি পেটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়াও ভাব বমি ভাব ও ডায়রিয়া খুবই কার্যকরী।
৩. ভাত
ভাবে কোনো মশলা বা লবন থাকে না। তাই এটি পেটের ব্যথা থাকলে তা নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে। পেটে ব্যথা হলে ভারি ও বেশি মশলা জাতীয় খাবার পরিহার করে একটু নরম করে ভাত খেতে পারেন। আর চেষ্টা করবেন এর সঙ্গে একটু হালকা ও পাতলা জাতীয় কিছু খেতে।
৪. টোস্ট
টোস্ট বিস্কুট বা ওভারকুক করা রুটি পেট ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে। এতে তেমন কোনো তেল থাকে না। আর এ ছাড়া একটু পোড়া রুটি বা টোস্ট বমি ভাব কমাতেও সহায়তা করে।
৫. পুদিনা পাতা
পেটের ব্যথা ও বমি ভাব কমাতে এবং পেট খারাপের জন্য অনেক সহায়ক একটি প্রাকৃতিক সমাধাণ হচ্ছে পুদিনা পাতা। এটির প্রকৃতিক ব্যথানাশক বৈশিষ্ট রয়েছে। তাই পেট ব্যথা কমানোর প্রাকৃতিক সমাধাণ হিসেবে চায়ের সঙ্গে বা চিবিয়ে পুদিনা পাতা খেতে পারেন।
৬. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে অ্যাসিড স্টার্চ থাকায় তা হজম করতে সাহায্য করে অন্ত্রের ব্যকটেরিয়াকে সুস্থ রাখে। আর এ কারণে এটি পেটের ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে।
এর জন্য এক কাপ পানিতে এক চামুচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার ও এক চামুচ মধু মিশিয়ে পান করলে উপকার পাবেন।
পেটে ব্যাথা হলে কি খাওয়া উচিত /পেটের ব্যথায় যা খাওয়া ভালো
পেটের সমস্যায় যে ধরনের খাবার খেলে উপকার পেতে পারেন পুষ্টি বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন মোতাবেক।
কলা: কলায় প্রচুর ফাইবার থাকে। কলা হজম সহায়ক ফল এবং মল প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট সাহায্য করে। কলায় থাকে প্রচুর পেকটিন উচ্চ খনিজ সমৃদ্ধ যা হজমি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
দই বা ঘোল: প্রোবায়োটিক এর প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে দই। 82 খাবার হজমে প্রোবায়োটিক সহায়তা করে থাকে। দুই শরীরে আদ্র রাখতে এবং প্রোবায়োটিক যোগাতে যথেষ্ট সহযোগিতা করে।
টোস্ট: টোস্ট এ থাকে কার্বহাইড্রেটস যা পেটের সমস্যা দূরীকরণে প্রচুর কার্যকারী।
ডাবের পানি: ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ইলেক্ট্রোলাইট থাকে যা শরীরের আদ্র রাখতে প্রচুর সহযোগিতা করে থাকে। এজন্য ডাবের পানি শরীরের পানিশূন্যতা বয়স উচ্চতা কমাতে কার্যকরী।
এড়িয়ে চলতে হবে
পেটের সমস্যা দেখা দিলে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত- তেলে ভাজা খাবার, মসলাদার খাবার, কাঁচা-সবজি (হজমে সমস্যা করে), দুধ, চা এবং কফি।
পেট ব্যথার ঔষধ কি?
টাইমোনিয়াম সালফেট (Tiemonium sulphate): যেকোন প্রকার পেটে ব্যাথার ক্ষেত্রে বিশেষ করে পিরিয়ডের প্রথম কয়েক দিনের ব্যাথার জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি ওষুধ। (আরও জানতে দেখুন কষ্টকর ঋতুস্রাব ও বাড়িতে বসে কষ্টকর স্রাবের নিরাময়)
পেট ব্যাথা হলে প্যারাসিটামল খেতে হবে | বেশি পেট ব্যাথার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে | কেননা পেট ব্যাথা অনেকগুলো করনে হয়ে থাকে,,যেমন ধরেন গ্যাস বা পেটের ভেতর ময়লা জমা হলে,,আরো বহু কারনে | তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনে ঔষধ খাওয়া ঠিক নয়