পিটুইটারি গ্রন্থিকে মাস্টার গ্ল্যান্ড বলা হয় কেন
পিটুইটারি গ্রন্থিকে “মাস্টার গ্ল্যান্ড” বলা হয় কারণ এটি শরীরের অন্যান্য অন্তঃস্রাবী (হরমোন নিঃসরণকারী) গ্রন্থিগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় করে। এই গ্রন্থি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসরণ করে, যা শরীরের বৃদ্ধি, বিপাক প্রক্রিয়া, প্রজনন, এবং পানি ও লবণের ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করে।
পিটুইটারি গ্রন্থিকে মাস্টার গ্ল্যান্ড বলা মূল কারণগুলো:
অন্যান্য গ্রন্থিকে নিয়ন্ত্রণ করে: | · এটি থাইরয়েড, অ্যাড্রিনাল, ওভারি, টেস্টিস এবং অন্যান্য অন্তঃস্রাবী গ্রন্থির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন উৎপন্ন করে। · উদাহরণস্বরূপ, থাইরয়েড–উত্তেজক হরমোন (TSH) থাইরয়েড গ্রন্থিকে সক্রিয় করে।
|
গুরুত্বপূর্ণ হরমোন উৎপাদন: | · গ্রোথ হরমোন (GH) শরীরের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। · লুটিনাইজিং হরমোন (LH) ও ফোলিকল–স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH) প্রজনন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। · অক্সিটোসিন ও প্রোল্যাকটিন মাতৃত্বের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। · হাইপোথ্যালামাসের সাথে সমন্বয়:
· পিটুইটারি গ্রন্থি হাইপোথ্যালামাসের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে, যা শরীরের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমের উপর প্রভাব ফেলে।
|
হাইপোথ্যালামাসের সাথে সমন্বয়: | পিটুইটারি গ্রন্থি হাইপোথ্যালামাসের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে, যা শরীরের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমের উপর প্রভাব ফেলে। |
শরীরের ভারসাম্য রক্ষা: | · অ্যান্টিডাইরিউটিক হরমোন (ADH) দেহের পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
· অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রোপিক হরমোন (ACTH) স্ট্রেস প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। |
পিটুইটারি গ্রন্থি মাস্টার গ্ল্যান্ড হিসেবে কি কি কাজ করে থাকে
পিটুইটারি গ্রন্থির প্রধান কাজগুলো:
পিটুইটারি গ্রন্থি | মাস্টার গ্ল্যান্ড হিসেবে কাজ |
শরীরের বৃদ্ধি ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ | গ্রোথ হরমোন (GH): শরীরের কোষ বৃদ্ধি, পেশি গঠন, ও হাড়ের দৈর্ঘ্য বাড়াতে সাহায্য করে।
GH-এর ঘাটতি হলে খর্বতা (ডোয়ার্ফিজম) এবং অতিরিক্ত উৎপাদন হলে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি (জাইগান্টিজম, অ্যাক্রোমেগালি) দেখা দেয়। |
বিপাক ক্রিয়া ও শক্তি নিয়ন্ত্রণ | থাইরয়েড–উত্তেজক হরমোন (TSH):
থাইরয়েড গ্রন্থিকে থাইরয়েড হরমোন (T3, T4) উৎপাদনে উদ্দীপিত করে, যা বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। TSH-এর ভারসাম্যহীনতা হলে হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম হতে পারে। |
স্ট্রেস ও বিপাকীয় প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ | অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রোপিক হরমোন (ACTH):
এটি অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে কর্টিসল হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে, যা স্ট্রেস ব্যবস্থাপনা ও বিপাক প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। ACTH-এর অতিরিক্ত নিঃসরণ কুশিং সিনড্রোম সৃষ্টি করতে পারে। |
পানি ও লবণের ভারসাম্য রক্ষা | অ্যান্টিডাইরিউটিক হরমোন (ADH) বা ভ্যাসোপ্রেসিন:
কিডনিতে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে, যাতে দেহে পানিশূন্যতা না হয়। ADH-এর ঘাটতি হলে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস দেখা দিতে পারে, যার ফলে অতিরিক্ত প্রস্রাব ও পানিশূন্যতা হয়। |
প্রজনন ও যৌন হরমোন নিয়ন্ত্রণ | লুটিনাইজিং হরমোন (LH) ও ফোলিকল–স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH):
পুরুষ ও নারীদের প্রজনন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুরুষদের টেস্টোস্টেরন উৎপাদন এবং নারীদের ডিম্বাণু পরিপক্বতা ও মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। |
মাতৃত্ব ও দুধ উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ | প্রোল্যাকটিন (PRL):
মায়েদের স্তন্যপানকালে দুধ উৎপাদনে সাহায্য করে। অতিরিক্ত প্রোল্যাকটিনের কারণে মাসিক অনিয়ম ও বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অক্সিটোসিন:
প্রসবকালীন জরায়ুর সংকোচন ঘটায় এবং মায়ের দুধ নিঃসরণে সাহায্য করে। এটি বন্ধন ও ভালোবাসার অনুভূতির সঙ্গেও সম্পর্কিত। |