ঈদুল ফিতর নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি বাঙ্গালীদের জন্য বাংলা ভাষায় কবিতা ও গানে অমর হয়ে থাকবেন। তিনি শুধু বাংলা কবিতা ও গান লিখেন নি ইসলামী অসংখ্য কবিতা ও গান লিখেছেন। তাছাড়াও তিনি ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ কবিতা ও গান লিখেছেন ইতিহাস রয়েছে। পবিত্র রমজান মাস রোজা শেষে মুসলমানরা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন এবং বিভিন্ন জায়গায় রমজানের শেষে যে গানটি তুলে ধরা হয়েছে তা হচ্ছে কাজী নজরুল ইসলামের ঐতিহাসিক ঈদুল ফিতরের গান।
আসুন আজ আমরা রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির দিন কাজী নজরুল ইসলামের ঐতিহাসিক ঈদ-উল-ফিতরের গানটি এখানেই সংযুক্ত করেছি। যারা রমজানের এই গানটি ভালোবাসেন এবং সংগ্রহ করতে চান তারা আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে গানটি শুরু করতে পারেন
ঈদুল ফিতর বিষয়ক কবিতা ও শ্রেষ্ঠ গান
কাজী নজরুলের সেই বিখ্যাত রমজানের শ্রেষ্ঠ কবিতা ও গান টি আজ আমরা আপনাদের সাথে তুলে ধরব। আপনি যদি এই গানটি অনুসন্ধান করে থাকে তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করুন
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন্ আসমানি তাগিদ।। তোর সোনা–দানা বালাখানা সব রাহেলিল্লাহ্। দে জাকাত মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিদ্।। আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে। যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।। আজ ভুলে যা তোর দোস্ত ও দুশমন হাত মিলাও হাতে। তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ।। ঢাল হৃদয়ের তোর তশ্তরিতে শির্নি তৌহিদের। তোর দাওয়াত কবুল করবে হজরত হয় মনে উম্মীদ।। বিলিয়ে দেওয়ার আজিকে ঈদ। আমার দানের অনুরাগে-রাঙা ঈদগা’ রে! সকলের হাতে দিয়ে দিয়ে আজ আপনারে— দেহ নয়, দিল হবে শহীদ। ঈদ মুবারক শত যোজনের কত মরুভূমি পারায়ে গো, কত বালু চরে কত আঁখি-ধারা ঝরায়ে গো, বরষের পরে আসিল ঈদ! ভূখারীর দ্বারে সওগাত বয়ে রিজওয়ানের, কন্টক-বনে আশ্বাস এনে গুল-বাগের, সাকীরে ”জা’মের” দিলে তাগিদ! খুশীর পাপিয়া পিউ পিউ গাহে দিগ্বিদিক, বধু-জাগে আজ নিশীথ-বাসরে নির্নিমিখ্। কোথা ফুলদানী, কাঁদিছে ফুল! সুদূর প্রবাসে ঘুম নাহি আসে কার সখার, মনে পড়ে শুধু সোঁদা সোঁদা বাস এলো খোঁপার, আকুল কবরী উলঝলুল্!! ওগো কা’ল সাঁঝে দ্বিতীয়া চাঁদের ইশারা কোন্ মুজদা এনেছে, সুখে ডগমগ মুকুলী মন! আশাবরী-সুরে ঝুরে সানাই। আতর সুবাসে কাতর হ’ল গো পাথর-দিল্, দিলে দিলে আজ বন্ধকী দেনা—-নাই দলীল, কবুলিয়াতের নাই বালাই।। আজিকে এজিদে হাসেনে হোসেনে গলাগলি, দোজখে বেহেশ্তে ফুলে ও আগুনে ঢলাঢলি, শিরীঁ ফরহাদে জড়াজড়ি। সাপিনীর মত বেঁধেছে লায়লি কায়েসে গো, বাহুর বন্ধে চোখ বূঁজে বঁধু আয়েসে গো। গালে গালে চুমু গড়াগড়ি।। দাউ দাউ জ্বলে আজি স্ফুর্তির জাহান্নাম শয়তান আজ বেহেশ্তে বিলায় শরাব-জাম, দুশমন দোস্ত্ এক-জামাত! আজি আরাফাত্-ময়দান পাতা গাঁয়ে গাঁয়ে, কোলাকুলি করে বাদশা-ফকীরে ভায়ে ভায়ে, কা’বা ধ’রে নাচে ”লাত্-মানাত”।। আজি ইসলামী-ডঙ্কা গরজে ভরি’ জাহান, নাই বড় ছোট–সকল মানুষ এক সমান, রাজা প্রজা নয় কারো কেহ। কে আমীর তুমি নওয়াব বাদশা বালাখানায়? সকল কালের কলঙ্ক তুমি: জাগালে হায় ইসলামে তুমি সন্দেহ।। ইসলাম বলে, সকলের তরে মোরা সবাই, সুখ-দুখ সম-ভাগ ক’রে নেব সকলে ভাই, নাই অধিকার সঞ্চয়ের। কারো অখিঁ-জলে কারো ঝাড়ে কিরে জ্বলিবেদীপ? দু’জনার হবে বুলন্দ-নসিব, লাখে লাখে হবে বদনসিব? এ নহে বিধান ইসলামের।। ঈদ্-অল-ফিতর আনিয়াছে তাই নব বিধান, ওগো সঞ্চয়ী, উদ্বৃত্ত যা করিবে দান, ক্ষুধার অন্ন হোক তোমার! ভোগের পিয়ালা উপচায়ে পড়ে তব হাতে, তৃষ্ণাতুরের হিসসা আছে ও পিয়ালাতে, দিয়া ভোগ কর, বীর, দেদারঅঅ বুক খালি ক’রে আপনারে আজ দাও জাকাত, ক’রো না হিসাবী, আজি হিসাবের অঙ্কপাত! একদিন কর ভূল হিসাব দিলে দিলে আজ খুনসুড়ি করে দিললগী, আজিকে ছায়েলা-লায়েলা-চুমায় লাল যোগী! জামশেদ-বেচে চায় শরাব।। পথে পথে আজ হাঁকিব, বন্ধু, ঈদ-মোবারক! আসসালাম! ঠোঁটে ঠোঁটে আজ বিলাব শিরনী ফুল-কালাম! বিলিয়ে দেওয়ার আজিকে ঈদ। আমার দানের অনুরাগে-রাঙা ঈদগা’ রে! সকলের হাতে দিয়ে দিয়ে আজ আপনারে.
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কাজী নজরুল ইসলামের সেরা কবিতা
কাজী নজরুল ইসলাম ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তার শহীদি ঈদ কবিতাটি সেরা কবিতা হিসাবে পরিচিত.
১ শহীদের ঈদ এসেছে আজ শিরোপরি খুন-লোহিত তাজ, আল্লাহর রাহে চাহে সে ভিখ্: জিয়ারার চেয়ে পিয়ারা যে আল্লার রাহে তাহারে দে, চাহি না ফাঁকির মণিমানিক।
২ চাহি না ক’ গাভী দুম্বা উট, কতটুকু দান? ও দান ঝুট। চাই কোরবানী, চাই না দান। রাখিতে ইজ্জত্ ইসলামের শির চাই তোর, তোর ছেলের, দেবে কি? কে আছ মুসলমান?
৩ ওরে ফাঁকিবাজ, ফেরেব-বাজ, আপনারে আর দিস্নে লাজ,- গরু ঘুষ দিয়ে চাস্ সওয়াব? যদিই রে তুই গরুর সাথ পার হয়ে যাস পুল্সেরাত, কি দিবি মোহাম্মদে জওয়াব।
৪ শুধাবেন যবে-ওরে কাফের, কি করেছ তুমি ইসলামের? ইসলামে দিয়ে জাহান্নম আপনি এসেছ বেহেশ্ত্ ’পর- পুণ্য-পিশাচ! স্বার্থপর! দেখাস্নে মুখ, লাগে শরম!
৫ গরুরে করিলে সেরাত পার, সন্তানে দিলে নরক-নার! মায়া-দোষে ছেলে গেল দোজখ। কোরবানী দিলি গরু-ছাগল, তাদেরই জীবন হ’ল সফল পেয়েছে তাহারা বেহেশ্ত্-লোক!
৬ শুধু আপনারে বাঁচায় যে, মুসলিম নহে, ভন্ড সে! ইসলাম বলে-বাঁচ সবাই! দাও কোরবানী জান্ ও মাল, বেহেশ্ত্ তোমার কর হালাল। স্বার্থপরের বেহেশ্ত্ নাই।
৭ ইসলামে তুমি দিয়ে কবর মুসলিম ব’লে কর ফখর! মোনাফেক তুমি সেরা বে-দীন! ইসলামে যারা করে জবেহ্, তুমি তাহাদেরি হও তাবে। তুমি জুতো-বওয়া তারি অধীন।
৮ নামাজ-রোজার শুধু ভড়ং, ইয়া উয়া প’রে সেজেছ সং, ত্যাগ নাই তোর এক ছিদাম! কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কর জড়, ত্যাগের বেলাতে জড়সড়! তোর নামাজের কি আছে দাম?
৯ খেয়ে খেয়ে গোশ্ত্ রুটি তো খুব হয়েছ খোদার খাসী বেকুব, নিজেদের দাও কোরবানী। বেঁচে যাবে তুমি, বাঁচিবে দ্বীন, দাস ইসলাম হবে স্বাধীন, গাহিছে কামাল এই গানই!
১০ বাঁচায়ে আপনা ছেলে-মেয়ে জান্নাত্ পানে আছ্ চেয়ে ভাবিছ সেরাত হবেই পার। কেননা, দিয়েছ সাত জনের তরে এক গরু! আর কি, ঢের! সাতটি টাকায় গোনাহ্ কাবার!
১১ জান না কি তুমি, রে বেঈমান! আল্লা সর্বশক্তিমান দেখিছেন তোর সব কিছু? জাব্বা-জোব্বা দিয়ে ধোঁকা দিবি আল্লারে, ওরে বোকা! কেয়ামতে হবে মাথা নীচু!
১২ ডুবে ইসলাম, আসে আঁধার! ব্রাহিমের মত আবার কোরবানী দাও প্রেয় বিভব! “জবীহুল্লাহ্” ছেলেরা হোক, যাক সব কিছু-সত্য রোক! মা হাজেরা হোক মায়েরা সব।
১৩ খা’বে দেখেছিলেন ইব্রাহিম- “দাও কোরবানী মহামহিম!” তোরা যে দেখিস্ দিবালোকে কি যে দুর্গতি ইসলামের! পরীক্ষা নেন খোদা তোদের হাববের সাথে বাজি রেখে!
১৪ যত দিন তোরা নিজেরা মেষ, ভীরু দুর্বল, অধীন দেশ,- আল্লার রাহে ততটা দিন দিও না ক’ পশু কোরবানী, বিফল হবে রে সবখানী! (তুই) পশু চেয়ে যে রে অধম হীন!
১৫ মনের পশুরে কর জবাই, পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই। কশাই-এর আবার কোর্বানী!- আমাদের নয়, তাদের ঈদ, বীর-সুত যারা হ’ল শহীদ, অমর যাদের বীরবাণী।
১৬ পশু কোরবানী দিস্ তখন আজাদ-মুক্ত হবি যখন জুলম-মুক্ত হবে রে দীন।- কোরবানীর আজ এই যে খুন শিখা হয়ে যেন জালে আগুন, জালিমের যেন রাখে না চিন্!! আমিন্ রাব্বিল্ আলামিন! আমিন রাব্বিল্ আলামিন!!
সর্বশেষ বলা যায় সেই ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নজরুল রচিত ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গান হিসাবে পরিচিত এবং ইতিহাস রয়েছে। যারা ঈদুল ফিতরের গান অনুসন্ধান করেন তাদের জন্য এই গানটি উপলব্ধ। তাছাড়াও আপনি যদি ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে গান ও কবিতা সংগ্রহ করতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন এবং নিত্য নতুন গান ও কবিতা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে শুনতে পারবেন